জাঙ্ক ডিএনএ

Published by SNNAFI on

জাঙ্ক ! জাঙ্ক ! জাআআঙ্ক ডিএনএ !!! এইটা আবার কি ?

ধরা যাক, কোন উপস্থাপনা , বক্তব্য স্ক্রিপ্টের কথা । সেগুলোও সাদা কাগজে আর আট দশটা লেখার মতোই লেখা হয়। কিন্তু এগুলোর মূল্য অন্যরকম। এগুলোও পাঠ করা যায়। কিন্তু এগুলো অন্যকে প্রভাবিতও করে। হতে পারে, এই স্ক্রিপ্টের লেখা বক্তব্য একটি দেশের ইতিহাসকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম ।

তেমনি বলা যায় ডিএনএ এর কথা । মাত্র চারটা । জি চারটা অক্ষর দিয়ে ব্যাকটেরিয়া থেকে হাতি বা ইস্ট থেকে নীল তিমির সব কিছুর কোড লিপিবদ্ধ আছে । কিন্তু যখন ডিএনএ কে টেস্টটিউবে টেস্ট করা হয়, তখন নিরীহ গোছের মনে হয়। যেন, সব রহস্য সঠিক জায়গার অপেক্ষায় আবৃত করে আছে। যখন কোন জীবকোষে ডিএনএ ব্যবহৃত হয়, তখন এর রহস্যময়তা ভেদ হতে শুরু করে। আসলেই কি তাই ?

ডিএনএ থেকে কোড ব্যবহৃত হয়ে প্রোটিন তৈরি হয় যা কোনটা খাদ্য গ্রহণের ভাইটাল ভূমিকা পালন করে, কোনটা শ্বাস প্রশ্বাসে কোনটা বর্জ্য অপসারণে, কোনটা প্রজননে । এভাবে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ জীবে।

প্রোটিন জীবদেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । বিজ্ঞানীরা যেটাকে মূলত জিন হিসেবে বুঝিয়ে থাকেন । জিন মূলত ডিএনএ এর একটা নির্দিষ্ট সিকোয়েন্স যেটা একটা নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী ।

তাহলে, জাঙ্ক ডিএনএ কাকে বলা হয় ? একটা উদাহরণ দেয়া যাক। Shakespeare কে সবাই চিনি মোটামোটি । ধরা যাক উনি নিচের স্ক্রিপ্টটি লিখেছেন,

vjeqriugfrhbvruewhqoerahcxnqowhvgbutyunyhewqicxhjafvurytnpemxoqp[etjhnuvrwwwebc

কিছু বুঝা যাচ্ছে ? মূলত তিনি লিখেছেন এটা।

A rose by any other name would smell as sweet

আশা করি ব্যাপারটা অনেকেই ধরতে পেরেছেন। উপরের প্রথম লেখার মধ্যেই এই অক্ষরগুলো ছিল যা জুড়ে দিলে নিচের লাইনটি এসেছে। কিন্তু উপরের লাইনের অনেক অপ্রয়োজনীয় (আসলেই কি ! ) অক্ষর এসেছে।

ঠিক তেমনি, বলতে গেলে আরো বেশি জটিল, ডিএনএ এর মধ্যে, প্রোটিনের কোড করার জন্য দায়ী অক্ষরের বিন্যাসগুলো এভাবেই একেকটা করে অজানা / এলেমেলো অক্ষরের মধ্যে আছে। যেগুলো কোন প্রোটিন তৈরি করে না।

তো এই যে ডিএনএগুলো কোন প্রোটিন তৈরি করে না (!) মূলত সেগুলোকেই জাঙ্ক ডিএনএ বলা হয়। ২০০১ সালে যখন মানুষের জিনোম সিকোয়েন্স শেষ করা হয়, দেখা যায়, ৯৮% ডিএনএ ই হলো জাঙ্ক ডিএনএ !

জিনিসটা ভিন্নভাবেও ভাবা যায়। আমরা কিন্তু ফাইনাল প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলছি কেবল । ধরা যাক, কোন গাড়ির কোম্পানিতে গিয়ে দেখা গেলো দুইজন মানুষ গাড়ি তৈরি করছে আর বাকি ৯৮ জন বসে আছে। তাহলে কি ভাবা যায়, বাকি ৯৮ জন এমনেই বসে আছে ! তারা কোন কাজ করছে না ? না বরং , এটা বেশি যুক্তিসংগত হয় যে, হয়ত ৯৮ জন বাকি সব কাজ করছে, গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি , ফান্ড কালেক্ট করা, গাড়ি বেচা, বিজ্ঞাপন দেয়া। এভাবে সম্পূর্ণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

জাঙ্ক ডিএনএ বিষয়ে বলার জন্য এটা আরো বেশি যুক্তিগত বলা যায় । প্রোটিনকে ফাইনাল এন্ড প্রোডাক্ট বলা যায় জীবের জন্য। কিন্তু, তারা কখনোই সঠিকভাবে তৈরি এবং নির্দিষ্ট বিন্যাসে গিয়ে কাজ করতে পারবে না জাঙ্ক ডিএনএ এর সাহায্য ছাড়া। কারণ, একটা গাড়ি কোম্পানির ৯৮ জন শুধু শুধু বসে থাকতে পারে না বা দুইজনের পক্ষে সম্পূর্ণ গাড়ি তৈরি করা থেকে শুরু করে গাড়ি বিক্রি, কোম্পানি চালানো সব করা সম্ভব না ! আমাদের জিনের ক্ষেত্রেও এটা অন্যথা নয় !

আরেকটা আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে , মানুষের এতো এতো জটিল অঙ্গ / বুদ্ধিমত্তা কোন কিছুই ক্লাসিকাল জিনের মডেল দ্বারা বিশ্লেষণ করা সম্ভব না ! যদি, প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী জিনগুলোকে দিকে তাকানো যায় , তাহলে দেখা যাবে মানুষ প্রায় একই পরিমাণ জিন বহন করছে (২০০০০ এর মত ) একটা মাইক্রোস্কপিক জীবের মত। এর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, অনেক জিন আবার সরাসরি একই রকম মানুষ এবং মাইক্রোস্কপিক জীবে। অথচ, কত পার্থক্য !

যেহেতু গবেষকগন আরো বিস্তৃতভাবে গবেষণা করেছে যে ঠিক কি কারণে মানুষ আর অন্য প্রাণীর মধ্যে এতো অমিল , এটা বুঝা যায় যে, কেবলমাত্র জিন দ্বারা এটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব না । এটা পর্যাপ্ত ডাটা দিতে পারছে না । মূলত একটা জেনেটিক ফ্যাক্টর কমপ্লেক্সসিটি বাড়ার সাথে সাথে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কি সেটা ?

কেবল মাত্র একটাই জেনেটিক ফ্যাক্টর জীবের মধ্যে কমপ্লেক্সসিটি বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা হল জাঙ্ক ডিএনএ এর আয়তন। জীব যত বেশি কমপ্লেক্স তার জাঙ্ক ডিএনএ এর পরিমাণ তত বেশি।

শেষমেষ একটা বাক্য দিয়ে শেষ করছি,

“ There’s a bit of a linguistic difficulty in writing a book on junk DNA, because it is a constantly shifting term. This is partly because new data change our perception all the time. Consequently, as soon as a piece of junk DNA is shown to have a function, some scientists will say (logically enough) that it’s not junk. But that approach runs the risk of losing perspective on how radically our understanding of the genome has changed in recent years. “ – Nessa Carey

তথ্যসূত্রঃ Junk DNA: A Journey Through the Dark Matter of the Genome

Categories: Biology

0 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.